আমার অনার্সের রেজাল্ট ছিল খুবই খারাপ। এটা এক দিক দিয়ে ভাল হইছে, আমি সিদ্ধান্ত সহজে নিতে পেরেছিলাম যে এখানে আমার আর সময় নষ্ট করার কিছু নাই (যদিও মাস্টার্স করেছিলাম)।
অনার্স পাশ করার পর চাকরী পেতেও আমার খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নাই, একজন এসে বলেছে ফেসবুকে যা লিখেন তাই একটু আমাদের অফিসে এসে লিখে টিখে যাবেন, তাই করতাম, বেতন পাইতাম ১২০০০ টাকা।
অনার্সের রেজাল্ট খারাপ হওয়ার কারণে মনের মধ্যে অপরাধবোধ ছিল, বাবা ততদিনে অবসর প্রাপ্ত, তাকে আর বিরক্ত করা মানায় না। সেখানে থাকা অবস্থায় পরে ব্যাংকে চলে আসি।
এই সময়টা আমি কাজে লাগিয়েছি। আমি নীলক্ষেতে গিয়ে প্রথমে ক্লিফস টোফেল আর জিম্যাটের বই জোগাড় করেছি, বিসিএস এবং ব্যাংকের বিগত বছরে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করেছি।
তেমন বড় কোন বইটই পড়িনাই, এগুলা সল্ভ করার স্কিলের জন্য যা দরকার তাই করতাম। মনে করেন একটা বিগত বছরের প্রশ্ন সল্ভ করার সময় যেগুলা এমনিতেই পারতাম সেগুলার পিছনে সময় নষ্ট করতাম না, যেগুলা পারতাম না সেগুলা দাগিয়ে রাখতাম আর শিখার চেষ্টা করতাম।
বলা বাহুল্য কিছু জিনিসের প্রতি কোন সময় ব্যয় করতাম না, যেমন ২০০ দেশের রাজধানীর নাম।
এমনিতেই ৩০-৪০ টা পারতাম (যেসব দেশ ফুটবল খেলে সেগুলা এমনিতেই জানি, কিয়েভ যে ইউক্রেনের রাজধানী আজ পর্যন্ত এটা পড়ে শিখিনাই, ডায়নামো কিয়েভ নামের ফুটবল দল থেকেই জানি)।
এর বাইরে জোর করে কিছু শিখা আমার কাছে ছিল মেগাবাইটের অপচয়, ব্রেনে এত প্রেশার নেওয়া যাবে না।
এবার মূল কথায় আসি, আমার মত যারা নিজেদের সাবজেক্টে অনার্সে বেহাল অবস্থায় আছে, মানে সেই বিষয় নিয়ে আগানোর আর কোন মানে নাই তারা অনার্স শেষ করার সাথে সাথেই সময় নষ্ট না করে নিজেদের স্কিল বাড়ানোর কাজে নেমে গেলে ভাল হয়।
সব থেকে গুরুত্বপূর্ন হচ্ছে ইংরেজী আর অংকে ভাল হওয়া, কারণ এটার কোনই বিকল্প নাই। এই দুইটাই ভাল হলে যে কোন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভাল করা সহজ।
চাকরী পাওয়ার জন্য কোন পরীক্ষায় ১০০ তে ১০০ কেউ পায় না, আমি নিজেই একটা প্রাইভেট ব্যাংকে প্রথম ৫ জনের মধ্যে ছিলাম (ভাইভার সময় তারা বলে দিয়েছিল) এবং আমি নিশ্চিত কোনভাবেই রিটেনে ১০০ তে ৬৫ এর বেশি বাইরে নম্বর পাইনাই।
সত্যি কথা বলতে, ৫০ পাইলে সম্ভাবনা থাকে, ৬০ পাইলে মোটামুটি নিশ্চিতভাবে চাকরী পাওয়া যায়।
অনার্স শেষ করার পর সবার মধ্যে প্রথম যে চিন্তা আসে সেটা হল বিসিএস ক্যাডার হওয়া। এখন বিসিএস ক্যাডার একটা অসীম ধৈর্য্য পরীক্ষার জিনিস।
আপনি যদি কোটাভুক্ত হয়ে থাকেন তাহলে সত্যি কথা বলতে আপনার অবশ্যই বিসিএস ক্যাডারের প্রতি ১০০% মনযোগ থাকা উচিত কারণ এই দিকে সময় ও পরিশ্রম দিলে এটা আপনার কাছে ধরা দিতে বাধ্য।
আমার বন্ধু-বান্ধব যারা এই সুবিধাভুক্ত তারা কেউ আসলে বাদ যায়নাই, তাদের মেধা ছিল, সুবিধা ছিল, তারা পেয়ে গেছে।
আপনি যদি কোটাভুক্ত না হন, তাহলে বিসিএস এ ভাল ক্যাডার পেতে হলে আপনাকে অন্তত ২০০-২৫০ এর মধ্যে মেরিটে আসতে হবে। (কোটায় ৪০০০ তম হয়েও ভাল ক্যাডার পাওয়া যায় আর মেরিটে ২৬১তম হয়েও নন-ক্যাডার পায়)।
একটা বিসিএস পরীক্ষা অনেক সময়ের ব্যাপার, লক্ষ্য অবশ্যই সেদিকে থাকতে হবে কিন্তু এটাই ভাবতে হবে যে কতদিন আর চাকরীবিহীন অবস্থায় থাকা যায়! সেক্ষেত্রে বিসিএস এর পাশাপাশি ব্যাংকগুলাতেও চেষ্টা করা ভাল।
আর অনেক বিসিএস ক্যাডার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক (কেন্দ্রীয় ব্যাংক) অনেক ভাল চাকরী।
বেশির ভাগ ব্যাংকের প্রশ্ন করে আইবিএ, বিআইবিএম, ঢাবি বিজনেস ফ্যাকাল্টি এবং প্রাইভেট ব্যাংক গুলার ক্ষেত্রে প্রায় সবই আইবিএ। সেজন্য অনার্সের ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার সাথে সাথেই আইবিএ এর প্রিপারেশন নেওয়া যেতে পারে।
এই প্রিপারেশন যদি কেউ ঠিক ভাবে নেয়, গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি সে যদি কপাল খারাপে আইবিএতে নাও টিকে, প্রাইভেট ব্যাংকের কোথাও না কোথাও টিকে যাবে। কারণ দক্ষতা অর্জন করলে সবসময় ভাগ্য আটকাবে না।
অনার্স পাশ করার পর চাকরী পাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়টা জটিল, একটু সতর্কতার সাথে সঠিক পরিকল্পনায় সময়টা ব্যবহার করা উচিত।
হ্যাপি প্রিপেয়ারিং !
0 Comments
Leave a comment