এই সাকসেস স্টোরিটি ক্যাপসটোন এডুকেশনের অনুরোধে শেয়ার করেছেন ইউকে প্রবাসী জারিফ, যিনি ইউকেতেই একটি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে একাউন্ট সেকশণে আছেন । যারা ইউকের গ্রাজুয়েট, আইইএলটসের ৮.৫ প্রাপ্ত এবং আইবিএ থেকে এমবিএ করা ভাইয়ায়দের পরিচালিত স্পেশাল ব্যাচে ২০% ডিস্কাউন্টে জয়েন করতে চান তারা নিচের ডক ফাইলটি ফিল-আপ করুন ।
http://goo.gl/forms/f6OQoAzjOjPXGE8Q2
কিভাবে ভালো ১টা স্কোর পেলাম এটা বলার আগে আমার ব্যাকগ্রাউন্ড বলে নেয়া একটু জরুরী । আমার বাবা একজন স্বনামধন্য ব্যাবসায়ী । আমার তিন ভাই ও দুই বোন, আমি সবার ছোট । এক ভাই ইঞ্জিনিয়ার, এক ভাই এয়ার ফোর্সে আছেন, এক বোন ডাক্তার, আর এক বোন এডমিন ক্যাডারে আছেন । আমি ছিলাম গুড ফর নাথিং । কাইন্ড অফ স্পয়েল্ড চাইল্ড বলতে পারেন ।
ছোটবেলা থেকেই আমি অমনযোগীদের খাতায় নাম লিখিয়েছিলাম । যা নিয়ে আমার ফ্যামিলির মানুষের অভিযোগের অন্ত ছিল না । এর মধ্যে এড হল কিছুটা অসৎ সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া । ফলে আমি পুরোপুরি উচ্ছন্নেই যাচ্ছিলাম বলা যায় । ম্যাট্রিক, ইন্টারে খুবই সাধারণ মানের রেসাল্ট আমার ফ্যামিলির মানুষের হতাশা আরো বাড়িয়ে দিল । অবস্থা এরকম দাঁড়াল যে, আমার শুধু আমার বাবা-মা না, আমার অন্যান্য রিলেটিভরা আমাকে এড়িয়ে চলা শুরু করলো ।
এখানে বলে রাখা ভালো আমার বাসা থেকে কখনই আমাকে অনেক ভালো ছাত্র হতে হবে এরকম প্রেশার দেয়া হয় নাই । কিত্নু লাইফের ১টা লক্ষ্য বা ভিশন ঠিক করার জন্য সবাই চাপ দিত । তাদের কথা ছিল, আমি যদি বাবার সাথে ব্যাবসাতেও জড়িত হতে চাই তাতেও তাদের কোন সমস্যা নেই । কিছু ১টা করতেই হবে । বাট, আমি স্রোতের উল্টা দিকে গা ভাসিয়ে চলছিলাম । কোন কিছুই যেন আমাকে স্পর্শ করত না । ইন্টারের পর প্রায় ২ বছর চলে গেল কোথাও ভর্তিও হলাম না । কিছুই করতাম না বলা যায় ।
আর ছোটবেলা থেকেই অনেক প্রাচুর্যের মধ্যে বড় হওয়াতে আমার লাইফের ব্লেসিংগুলো নিয়ে আমার মধ্যে কোন বদারেশন ছিল না । প্রথম উপলব্ধিটা হল ২০০৮ এর দিকে । বড় আপুর বিয়ের জন্য পাত্রপক্ষ আমাদের বাসায় বেড়াতে এলেন । বড় ভাই বললেন, তুই আজকে বাসায় থাকিস না । কোথাও থেকে ঘুরে আয় । আমি অবাক হয়ে বললাম কেন ? সে বললেন এমনি ।
যাই হোক বাসা থেকে বের হবার সময় হঠাৎ করে অতিথিদের চোখে পড়ে গেলাম । তাদের একজন আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন আমি কে হই ? খুব অবাক হয়ে গেলাম । আমার পরিচয় কেও জানে না ? আমি আমার পরিচয় দিলাম । আপুর হবু বরের আব্বা জিজ্ঞাসা করলেন, বাবা কি করছ তুমি এখন ? আমি চুপ হয়ে রইলাম । ওদিকে দেখলাম, বাবা দরদর করে ঘামছেন । আম্মা অসহায় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন । আর দুই ভাই মাথা নিচু করে আছেন । এভাবে এক-দুই মিনিটের মত গেল । বাট আমার কাছে ঐ মুহূর্তটা অনন্তকালের মনে হচ্ছিল । শেষমেশ, আমি আনমনে উত্তর দিলাম দেশের বাইরে পড়তে যাবার জন্য চেষ্টা করছি ! বলে বের হয়ে গেলাম ।
সেই মুহূর্তে কেন এই কথা বলেছিলাম আমি নিজেও জানি না । বাসায় থেকে বের হয়ে ডিসাইড করলাম এনাফ ইজ এনাফ । আই হ্যাভ টু দু সামথিং । মাসখানেক আগে আমার এক বাউন্ডূলে ফ্রেন্ড ইউকে চলে গিয়েছিল । আমি ঠিক করলাম আমিও বাইরেই চলে যাব । আর প্রথম স্টেপটা শুরু হবে আইইলটস দিয়ে ।
তখন এত ভালো নেট ফ্যাসিলিটি ছিল না । সো ডাইরেক্ট ব্রিটিশ কাউন্সিল চলে গেলাম । ওখান থেকে কিছু ইনফো পেলাম বটে, তবে সেটা আমার মত দুর্বল স্টুডেন্টদের জন্য যথেষ্ট ছিল না । বড় ভাইয়ার এক বন্ধুকে নক করলাম যিনি ইউএসএ যাবার জন্য ট্রাই করছিলেন । উনি বেশ হেল্প করলেন । উনার রেফারেন্স অনুযায়ী কিছু বই নিলাম, ইংলিশের ব্যাসিক ঠিক করার জন্য । বাট ভাইয়া নিজেই যেহেতু ব্যাস্ত তাই ওভাবে সময় দিতে পারতেন না । ভাইয়া ১টা প্রাইভেট কোচিংয়ের নাম বললেন, যেটা ভাইয়ার কিছু ইউকে ফেরত ২-৩ জন বন্ধু মিলে শুরু করেছিলেন । সেটা অবশ্য এখন আর নেই । ভাইয়ারা সবাই দেশের বাইরে চলে গেছেন ।
যাই হোক ভাইয়াদের সে কোচিংয়েই শুরু হল আমার নতুন সংগ্রাম । ভাইয়াদের কাছ থেকে লেকচার নিতাম এবং সে অনুযায়ী ইমপ্লিমেন্ট করার চেষ্টা করতাম । পড়াশোনার সাথে খুব ১টা সখ্য না থাকাতে খুব ঝামেলাই হচ্ছিল । আড্ডাবাজি, ফালতু টাইম-পাস সব অফ করে দিলাম । নিজের জীবনকে ১টা রুটিনে আটকে দিলাম । নিজের মনকে আরও ফোকাসড করার জন্য আল্লাহ্র দিকে ঝুঁকলাম । নিয়মিত নামাজ পড়া শুরু করলাম । অর্থসহ কুরআন তিলাওয়াতও শুরু করলাম । নিজেকে যেআইএলটসে ৬ থেকে ৮ পাওয়ার গল্পন পুরোপুরি নতুন করে ফিরে পেলাম । বাঁচার অর্থ খুঁজে পেতে শুরু করলাম ।
বাসার সবাইও খুব খুশী আমার এই পরিবর্তনে । যাই হোক পরীক্ষা দিলাম বাট আশানুরূপ স্কোর পেলাম না, ৬ এর মত আসলো । নতুন উদ্দ্যমে আবারো শুরু করলাম । আরো বেশী ডিটারমিনেশন নিয়ে । প্রচুর ইংলিশ শুনতাম, ভাইয়াদের সাথে বাসায় স্পোকেন প্র্যাকটিস শুরু করলাম, শায়খ ইবন তাইমিয়ার বিভিন্ন ইংলিশ অনুবাদ পড়তে লাগলাম । মোট কথা ইংরেজীর বেড়াজালে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেললাম । কিছুদিনের মধ্যে আবার এক্সাম দিলাম । এবার আশানুরূপ স্কোর ৮ আসলো । আলহামদুলিল্লাহ্
যাই হোক পরবর্তীতে ইউকেতে চলে আসি এবং পেছনের জীবন পুরোপুরি ছেড়ে দেই । ইউকেতেই গ্রাজুয়েশন করার পর, এখানকার ১টি নামকরা ফার্মের একাউন্টস সেকশনে আছি । আজ আব্বা-আম্মা আমার পরিচয় দিতে গর্ব করেন !
শেষ কথা হচ্ছে, ১টা জিনিস যদি চান তবে সেটাকে ডেস্পারেটলী চাইতে হবে । কাজ একবার শুরু করার পর পেছনে তাকানো যাবে না । জীবন আপনাকে সব সময় দ্বিতীয় সুযোগ দিবে কিত্নু আপনাকে সে সুযোগটি দু হাত পেতে নিতে হবে ।
1 Comment
Minhaz Shuvro June 01, 2016
Inspiring (y)
Leave a comment