মোহাম্মদ আলী ( রহিমাহুল্লাহ) যে সময় মুসলিম হয়েছিলেন, সে সময় তিনি খ্যাতির শীর্ষে অবস্থান করছিলেন । কাল বিবিসির ১টা রিপোর্টে দেখছিলেম যে, ৬০-এর দশকে ব্রিটিশরা পর্যন্ত আইকনিক ফিগারের জন্য আমেরিকার দিকে তাকিয়ে থাকতো । আর সে সময় মোহাম্মদ আলীর চেয়ে আর বড় কোন আইকনিক ফিগার ছিল না ।
এই মানুষটি সেই সময়ে ডিক্লেয়ার করলেন যে, উনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন । উনি সাক্ষী দিচ্ছেন যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই, আর কেউ উপাসনা করার যোগ্য নয়, আর হজরত মোহাম্মদ( তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক) আল্লাহ্র রাসুল ।
জাস্ট চিন্তা করতে পারেন, উনার উপর কি পরিমাণ প্রেসার, খড়গ নেমে আসতে পারে ? সে সময় আমেরিকা ছিল রেসিসমের তুঙ্গে । তারা ক্রিস্টান এবং সাদা চামড়ার মানুষ ছাড়া কারো সাথে বাসে পর্যন্ত বসতে চাইত না । সেখানে ধর্ম পরিবর্তনের ঘোষণা দেওয়া, তাও বিড়ালের মত মিউ মিউ করে না, সিংহের মত গর্জন দিয়ে ।
উনি যেখানেই যেতেন ইসলাম নিয়ে কথা বলতেন । আল্লাহ্র প্রতি গ্রাটিচিউড প্রকাশ করতেন । ইসলাম গ্রহণ করে উনি কতটা সন্তুষ্ট, পরিতৃপ্ত ; কিভাবে ইসলাম তার জীবনকে বদলে দিয়েছে সেসব প্রকাশ করতেন গর্বের সাথে ।
উনার রিস্ক আর স্যকারিফাইস লেভেল আসলে আমাদের ধারনার বাইরে । আমরা ৫০-৬০ হাজার টাকা বেতনের হারাম চাকরী ছাড়তে পারি না । লে-ম্যান মুসলিমদের কথা বাদই দেন, অনেক নামকরা ইসলামিক স্কলার পর্যন্ত পশ্চিমা এগ্রেশন ও জুলুমের বিষয়ে কথা বলতে মিন মিন করেন ।
হুমায়ূন আহমেদ এক লেখায় বলেছিলেন, আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবিরা একটু খ্যাতির মুখ দেখলে, দুই-একটা ন্যাশনাল সেমিনারে বক্তব্য দিলে ইসলামকে নিচু দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করেন । যেখানে পুজো-বড় দিন- বৌদ্ধ পূর্ণিমা গুলোতে অংশ নেয়াকে তারা অসাম্প্রদায়িকতা হিসেবে ট্রিট করেন, সেখানে ঈদ-রোজা বা অন্যান্য ইসলামিক রিচুয়াল নিয়ে কথা বলতে তারা লজ্জবোধ করেন ।
আর ওদিকে নাম, যশ, খ্যাতি, স্পন্সরশীপ কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে আলী তার ফেইথ ডিক্লেয়ার করলেন । উনার বক্সিং লাইসেন্স কেড়ে নেয়ার হুমকি দেয়া হল । উনি উল্টো আরো এক পা আগিয়ে বললেন যে, উনি ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নিবেন না এবং খ্রিস্টানদের পক্ষ হয়ে নিরীহ মানুষ মারবেন না । এবার জেলে পাঠানোর হুমকি এল কিন্তু আলী নির্বিকার । উনি ইসলামেই স্টিক থাকলেন ।
ইসলামকে আঁকড়ে ধরলে আল্লাহ্ দুনিয়া এবং আখিরাত দুটোই দিবেন বলে ওয়াদা করেছেন । আলীর সাময়িক পরীক্ষাগুলো খুব দ্রুতোই কেটে গেল । উনি খ্যাতির চূড়ান্ত শিখায় পৌঁছেছিলেন । উনাকে বলা হয়, বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে সেলিব্রেটেড এবং জনপ্রিয় এথলেট । তার মৃত্যুতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই কেঁদেছে ।
নিঃসন্দেহে আল্লাহ্র ওয়াদা সত্য । The end, the victory belongs to the believers.
May Allah grant Muhammad Ali jannatul ferdous !
0 Comments
Leave a comment